গিরিশ চন্দ্র সেন

প্রাথমিক পরিচয়ঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন ছিলেন একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। ব্রাক্ষ্যধর্ম প্রচারক ও সাংবাদিক। তিনি হলেন ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধ্রমগ্রন্থ ‘ কোরআন শরিফের’ ১ম বাংলা অনুবাদক। তার এই অনুবাদ গ্রন্থের জন্য ত্যকালিন মুসলমান সমাজ কুরআন শরিফের বাংলা ভাষায় পড়তে পেরেছিলেন। শুদু মুসলমান সমাজই নয় সকল ধর্মের লোকই কুরআন শরিফের বাংলা ভাষায় পড়তে পেরেছিলেন। তিনি শুধু কোরআন শরিফের’ ১ম বাংলা অনুবাদক নয়। ইসলাম ধর্মের বহু হাদিসেরও বাংলা অনুবাদ করেন। তিনি কোরআন শরিফের’ ১ম বাংলা অনুবাদ না করলেও অনুবাদ হতো কিন্তু সেটা কত বছর পর হতো সেটা কে জানত। গিরিশ চন্দ্র সেন বাংলায় কোরআন শরিফের’ অনুবাদ করার পর অনেকেই কোরআন শরিফের অনুবাদ করার অনুপ্রানিত হয় কাজ শুরু করে দেন।

জন্ম ও পরিচয়ঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন কোরআন শরিফের’ ১ম বাংলা অনুবাদক তিনি ১৮৩৫ সালে ত্যকালিন ঢাকা জেলার পাচদোনা ( বর্তমান নরসিংদী জেলার ) জন্ম গ্রহণ করেন। গিরিশ চন্দ্র সেন
এর পিতার নাম ছিলেন মাধব রায় ও ।তার পূর্ব পরুষ ছিল নবাবের দেওয়ান। দর্পনারায়ন ফার্সি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। তার পূর্ব সূত্রে চলে আসে গিরিশ চন্দ্র সেন এর পর্যন্ত। তায় তিনি ছোট বেলা থেকেই ফার্সি ভাষা জানতেন। সেন পরিবার তখন ঢাকা জেলার বিখ্যাত ছিলেন। সেন বংশের আদি পুরুশগণ মালদহ জেলার আদিবাসী ছিলেন। প্রবর্তিতে পাচদোনায় এসে বসতি গড়েন।

পরিবার পরিচিতিঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন এর পিতা মাধব রায় সেন তিনি ছিলেন ঐ সময়ে নামকরা ফার্সি ভাষার পণ্ডিত। মাধব রায়ের পিতার নাম ছিল রামমোহন সেন। মাধব রায়ের চাচার নাম ছিল দর্পনারায়ন রায়। তিনি ছিলেন নবাবা মুর্শিদকুলি খাঁর দেওয়ান। তিনি মুর্শিদকুলি খাঁর রাজ দরবার থেকে রায় উপাদিতে ভূষিত হন। গিরিশ চন্দ্র সেনরা ছিল ৩ ভাই তবে তাদের কোন বোন ছিল কিনা তা জানা যায়নি। তার বড় ভাইয়ের নাম ছিল ঈশর চন্দ্র সেন,মেঝ ভাই হরচন্দ্র সেন ও ছোট ছিল তিনি নিজেই। তার পরিবার ছিল খুবই প্রতাপশালী। তিন ভাই ও মা বাবা নিয়ে ভালই ছিলেন। তিনিও ভাল ভাবেই বেড়ে উঠেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র ১০ বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। বাবার মারা যাওয়াতে পরিবার অভিবাবকহিন হয়ে পড়েন। এই সময় তার বড় ভাই সংসারের হাল ধরেন।

শিক্ষা জীবনঃ

গিরিশ চন্দ্র সেন এর পরিবারের সবাই ছিলেন শিক্ষিত ও ফার্সি পণ্ডিত। তাই তার পরিবার থেকেই তার শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। প্রথমে তিনি কলাপাতায় লিখে বাংলা বর্ণমালা শিখেন। গিরিশ চন্দ্র সেন এর বয়স যখন ৭ বছর সে সময় তার বাবা তাকে ফার্সি ভাষা শেখাতে শুরু করেন। এরপর আরবি শেখার জন্য ব্যবস্তা করেন একজন মৌলভীর। বাংলা, ফার্সি, আরবি একসাথে চলতে থাকে। কিন্তু তিনি আরবির চেয়ে ফার্সি ভাষায় বেশি পারদর্শী ছিলেন। কারন পরিবারের সকলেই ছিল ফার্সি ভাষার পণ্ডিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র ১০ বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। বাবার মারা যাওয়াতে পরিবার অভিবাবকহিন হয়ে পড়েন। এই সময় তার বড় ভাই তার অভিবাভকের দায়িত্ব পালন করেন। তার বড় ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল গিরিশ চন্দ্র সেনকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার। ঠিক তায় করেন তিনি। গিরিশ চন্দ্র সেনকে ভর্তি করেদেন ঢাকার পোগজ স্কুলে। কিন্তু পোগজ স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্তা তার কাছে ভাল লাগেনি। একদিন তিনি দেখেন তার সহপাঠীকে শাসনের দলে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। তখন ছাত্রদের পড়ালেখার সময় তাদের বেত মারা ছিল একটি কালচার। এর ফলে অনেক ছাত্রগন স্কুল ছেড়ে চলে আসতেন। গিরিশ চন্দ্র সেন এর ক্ষেত্রে একই অবস্থা হন। স্কুলের শিক্ষকদের শাসনের ফলে তিনি পোগজ স্কুল ছেরে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। তারপর বাড়িতেয় তার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। এর জন্য কৃষ্ণচন্দ্র নামের একটি ফার্সি পণ্ডিত রাখা হয়। সেখানে তিনি কৃষ্ণচন্দ্রর কাছে ফার্সি ও বাংলা শিখেন। পাশাপাশি তার কাছে বিভিন্ন ধরনের ফার্সি বই পড়েন। যার ফলে তিনি সাহিত্যর প্রতি কিছুটা প্রেরনা পান। ১৮৫২ সালে গিরিশ চন্দ্র সেন এর ছোট দাদা তাকে ময়মনসিংহে নিয়ে যান। সেখানে তাকে এক মৌলভির কাছে ভর্তি করে দেন পার্থ ভাষা শেখার জন্য। এরপর তিনি সংস্কৃতি ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ হন। ১৮৫৩ সালে সংস্কৃতি ভাষা শেখার জন্য একটি সংস্কৃতি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ……………।স্কুলে । এখান থেকে তিনি কৃতৃত্বের সাথে পাশ করেন। ১৮৭৬সালে আরবি শেখার জন্য তিনি লক্ষৌ যান তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর। তিনি সেখানে তিনি আরবি, ব্যকরন ছাড়া ও দিওয়ান –ই – হাদিসের পাঠ করেন। ১বছর আরবি পড়ার পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে আবার তিনি আরবি পড়ার জন্য মৌভির কাছে ভর্তি হন। এরপর তিনি কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি মৌল্ভী আলিম উদ্দিনের কাছে আরবি ইতিহাস ও আরবি সাহিত্যর উপর তিনি পড়ালেখা করেন। ১৮৭৮ সালে তিনি একটি কুরআন শরিফ কিনেন। তবে সে সময় ব্রাক্ষ্নের কাছে কেও কুরআন শরিফ বিক্রি করত না। তায় তিনি তার বন্দুর মাধ্যমে একটি কুরআন শরিফ কিনেন। শুরু করে দেন কুরআন চর্চা। অনেক ঘঠনার পর তিনি কুরানের তরজমা আয়ত্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি কুরানের বাংলা অনুবাদ করেন।

বিবাহ বন্ধন ও পারিবারিক জীবনঃ
১৮৫৭ সালে গিরিশ চন্দ্র সেন বিবাহ বন্দনে আবব্দ হন। তার স্ত্রীর নাম ব্রাক্ষময়ী দেবী। ব্রাক্ষময়ী দেবীর বাবা ছিল নরসিংদীর জমিদার। গিরিশ চন্দ্র সেন যখন বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর এবং তার স্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। বিয়ের প্রায় ১০ বছর পর গিরিশ চন্দ্র সেন ব্রাক্ষধর্মে দীক্ষিত হন। তবে তিনি তার স্ত্রিকে তার শুশুর বাড়িতে রাখেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীর অনুরুধে তাকে ময়মনসিংহে নিয়ে আসেন। ব্রাক্ষধর্মে নেয়ার ফলে তাকে বাসা পেতে অনেক কষ্ট করতে হন। তার এক বন্দুর মাধ্যমে কোনরকম একটু আশ্রয় পান। এসময় তার পরিবারে খুব অভাব ছিল। অভাব অনটনের মাধ্যমেও তাদের পরিবার সুখেরই ছিল। একসময় তাদের ঘরে আসে এক কন্যা সন্তান। জন্মের ১৫ দিনের মাথায় কন্যা সন্তান মারা যায়। ১৮৭০ সালে তার স্ত্রীও মারা যান। স্ত্রী মারা যাওয়ার ১২/১৩ বছর পূর্বে তার ছোট দাদা মারা যান। ভাই, সন্তান, স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে পড়েন। এ শোক কাটানোর জন্য তিনি ধর্মের প্রতি বেশী দুর্বল হয়ে পড়েন। এবং ব্রাক্ষধর্মে প্রচার শুরু করেন।

চাকরি জীবনঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন এর কর্ম জীবন শুরু হয় ১৯৫২ সালে ছোট দাদার সাথে ময়মনসিংহে আসার পর। এখানে তিনি পকল নিবিসে চাকরি করেন। এতে বেতন ছিল কিমি. যা দিয়ে তার খাওয়া দাওয়া কোনরকম হত। পরেতিনি চাকরি ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হন। স্কুল পাশ করার পর তিনি ময়মনসিংহের জেলা স্কুলের দ্বিত্বয় পণ্ডিত হিসেবে যোগদেন। এসময় তিনি এর পাশাপাশি ‘ ঢাকা প্রকাশনী’ পত্রিকায় ময়মনসিংহের প্রতিনিধি ছিলেন। গিরিশ চন্দ্র সেন কলকাতায় ভারত শ্রমে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি সাহিত্য ও ব্যকরন শিক্ষা দিতেন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত করেন। স্ত্রী মৃতুর পর তিনি সংসারের প্রতি আনিহা হয়ে পড়েন। তায় তিনি এই শোক থেকে মুক্তির জন্য ধর্ম প্রচার ও সাহিত্য রচনায় নিজেকে মনোনিবেশ করেন।

ব্রাক্ষধর্ম গ্রহণ ও প্রচারঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন ব্রাক্ষধর্মের প্রতি অনুরাগী হন ময়মনসিংহে মুড়াপারার জমিদার রামচন্দ্র বন্ধোপাধ্যায় এর কাছ থেকে। ১৮৬৫ সালে কেশব চন্দ্র সেন ময়মনসিংহে এসে ব্রাক্ষধর্মের প্রতি অনেককে অনুপ্রেরনা দেন। ১৮৬৭ সালে ময়মনসিংহে আসেন ব্রাক্ষধর্মে প্রচারক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কাছ থেকে ব্রাক্ষধর্মের প্রতি গিরিশ চন্দ্র সেন তালিম নেন। এরপর গিরিশ চন্দ্র সেন ব্রাক্ষধর্মের প্রতি আগ্রহ হন। এরপর তাকে বাড়িওলা তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। হিন্দু, মুসলিম, সবার কাছেই বিরাগভাজন হন। তাকে আর কেও বাসা ভাড়া দিতে চাননি। এমন কি তার স্ত্রী আন্তস্তা হয়ার পর কেও আসেনি। একসময় তাদের ঘরে আসে এক কন্যা সন্তান। জন্মের ১৫ দিনের মাথায় কন্যা সন্তান মারা যায়। ১৮৭০ সালে তার স্ত্রীও মারা যান। স্কুল পাশ করার পর তিনি ময়মনসিংহের জেলা স্কুলের দ্বিত্বয় পণ্ডিত হিসেবে যোগদেন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত করেন।এরপর তিনি যাযাবর রূপ ধারন করেন। ১৮৭৪ সালে কলকাতায় গমন করেন। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি উড়িষ্য, আসাম,উত্তর বঙ্গ, মধ্য ভারত, মাদ্রাজ, সহ অনেক স্থানে ভ্রমণ করেন। এরপর গিরিশ চন্দ্র সেন তার গুরু ব্রাক্ষধর্মের প্রধান কেশব চন্দ্র সেনের কাছ থেকে ধর্ম প্রচারক হিসেবে উপাধিপান। এরপর তিনি কিছু সময় ময়মনসিংহে অবস্থান করেন। তবে তিনি ব্রাক্ষধর্মে প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন। ১৮৭৫/৭৬ সালের দিকে ব্রাক্ষধর্মে ব্যক্তিরা হিন্দু, খৃষ্টান, ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ গুলো বাংলায় অনুবাদ করার জন্য সিধান্ত নেন। তাদের ধারনা ছিল সকল ধর্ময় শান্তি চায়। তায় তারা ৪ ধর্মকে একত্রিত করে ধর্ম প্রচার করেন। গিরিশ চন্দ্র সেন আরবি ও ফার্সি জানতেন। তায় ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন শরিফ অনুবাদের জন্য গিরিশ চন্দ্র সেনকে দায়িত্ব দেন। এর জন্য ভাল করে আরবি শিক্ষার জন্য ১৮৭৬ সালে ১২ বছর বয়সে ……………থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে তিনি ঢাকায় এসে কোরআন শরিফ অনুবাদ শুরু করেন।

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবনঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন মোটামোটি সাহিত্যিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেন। গিরিশ চন্দ্র সেন এর বয়স যখন ৭ বছর সে সময় তার বাবা তাকে ফার্সি ভাষা শেখাতে শুরু করেন। এরপর আরবি শেখার জন্য ব্যবস্তা করেন একজন মৌলভীর। বাংলা, ফার্সি, আরবি একসাথে চলতে থাকে। কিন্তু তিনি আরবির চেয়ে ফার্সি ভাষায় বেশি পারদর্শী ছিলেন। কারন পরিবারের সকলেই ছিল ফার্সি ভাষার পণ্ডিত।গিরিশ চন্দ্র সেন এর সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় ময়মনসিংহে আসারপর তিনি প্রথম কবিতা দিয়েয় তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। ঢাকায় প্রকাশিত ……………।পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশ হয়। গিরিশ চন্দ্র সেন এর প্রথম গ্রন্থের নাম ‘ বনিতা বিনোদ’’। ১৮৫৫ সালে এটির কিছু অংশ বিভিন্ন স্কুলের পাথ্যপুস্তকে স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে তিনি প্রকাশ করেন জীবনী গ্রন্থ ‘ ব্রাহ্মময়ী- রচিত। ১৮৮০ সালে তিনি কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করেন। ১৮৮১ সালে তিনি চ১৮৮৫ সালে মহানবী হজরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর জীবনী নিয়ে প্রকাশ করেন ‘ মহা পুরুষ জীবনী চরিত্র ২’’। ১৯০৬ সালে প্রকাশ ‘ মহাপুরুশ মুহাম্মদ ও ত্য প্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম। ঐ সময় তার এই গ্রন্থ গুলো ব্যপক ভাবে প্রচলন হয়ে উঠে ও তার সুনাম অর্জন করেন। সবার ধারনা তিনি শুধু ইসলাম ধর্ম পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করেন। কিন্তু তার জিবনে বেশীর ভাগ গ্রন্থই ইসলাম ধর্মের ও ধর্ম গুরুদ্গের নিয়ে বিভিন্ন জীবনী লেখেন। গিরিশ চন্দ্র সেন জিবনে ৩৩ টি গ্রন্থ রচনা করেগেছেন। এর মধ্যা ২২ টি গ্রন্থ ছিল ইসলাম ধর্ম নিয়ে। তবে অনেকের মতে তার বইয়ের সংখ্যা ৪০ টির বেশী হবে। তিনি জিবনে বেশ কয়েকটি পত্রিকার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। ১ম জিবনে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকার ময়মনসিংহের প্রতিনিধি ছিলেন। নারী পত্রিকার ‘ পরিচারিকা’ পত্রিকা প্রাকাশে তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিল। তিনি ‘ বঙ্গ বন্ধু’ ও ‘ সুলভ ও সমচার’ পত্রিকার সহযোগী অধঅ্যাপক হিসাবে ছিলেন। নারী জাতীর জাগরণের জন্য তিনি ‘ মহিলা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এটিতে তিনি ১২ বছর সম্পাদনা করেন। ১৯০৯ সালে প্রকাশ করেন ইমাম হাসান ও হোসেনের জীবনী। একি বছর তিনি ইসলামের ৪ খলিফা জীবন বৃতান্তনিয়ে ‘ চারিজন ধর্ম নেতে’

১ম কোরআন শরিফের অনুবাদকঃ
যে জিনিসটির জন্য গিরিশ চন্দ্র সেন ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশী পরিচিত সেটি হচ্ছে কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ। অনেকের মতে তার পূর্বে কেউ কেউ কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করেন। তবে কেউ গিরিশ চন্দ্র সেন এর আগে অনুবাদ করে থাকলেও স্মবত তারা পূর্ণাগ কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করতে পারেনি। তাই আমরা গিরিশ চন্দ্র সেনকে কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদক হিসেবে ধরে নিতে পারি। তবে এটি এখন সর্বজন স্বীকৃত। ব্রাক্ষধর্মের গুরু কেশব সেনের অনুপ্রেরনায় তিনি কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ শুরু করেন। তবে ঐ সময় এ ধরনের একটি কাজ করা ছিল খুবই কঠিন কাজ। কারন যেকোন ধর্মের গ্রন্থের অনুবাদ করা ছিল এক ধরনের মহামান। ধর্ম মতে তাকে চরম বেমান বলা হত। কিন্তু তিনি ঐ সময় রক্ষণশীল সমাজকে তোয়াক্কা করেনি। শুরু করে দেন কোরআন চর্চা। ১৮৮১ সালে ১২ ডিসেম্বর তিনি কোরআন শরিফের ১ম খণ্ড প্রকাশ করেন। এটি প্রকাশ হয় শেরপুরে চারু প্রেশ থেকে। এরপর তিনি কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ এর বাকি অংশ প্রকাশ করেন কোলকাতার বিধমন যন্ত্রে। কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ মোট ১২ টি খণ্ডে প্রকাশ হয়। অনুবাদ শেষ হয় ১৮৮৬ সালে । ১৮৮৬ সালে তিনি ১২ টি খণ্ডকে একত্র করে কোরআন শরিফের পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।

স্ত্রী শিক্ষায় গিরিশ চন্দ্র সেনের অবদানঃ
স্ত্রী শিক্ষায় গিরিশ চন্দ্র সেন এর অবদান কম নয়। স্ত্রী শিক্ষার জন্য নরসিংদীর পাচদোনায় এবং ময়মনসিংহে বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি নারী শিক্ষার জন্য একটি অবৈতনিক কলেজ স্থাপন করেন। এই কলেজে তিনি নিজেই পড়াতেন। তবে এর জন্য তিনি কোন বেতন নিতেন না। ( বামতোপনি ) নামক নামক একটি নারিবান্ধব পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। পরিচারিকা নামক একটি নারী পত্রিকা প্রকাশে তিনি অন্যতম ভূমিকা রাখেন। তিনি ‘ মহিলা’’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রায় ১২ বছর পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন। তার শেষ জিবনে তিনি অসহায় নারিদের জন্য তার সম্পত্তির ১২ আনাই তাদের জন্য দান করে দেন।

বঙ্গ ভঙ্গে ও গিরিশ চন্দ্র সেনঃ
১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গ হয় তিনি এর পক্ষে ছিলেন। তিনি চিন্তা করে দেখেন মুসলমান সমাজ হিন্দু সম্প্রদায় দ্বারা নির্যাতিত। তারা মাথা তুলে দাড়াতে পারছেনা। যদি বঙ্গ ভঙ্গ হয় তাহলে পূর্ব বাংলার মুসলমান সমাজ মাথা তুলে দাড়াতে পারবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেনঃ ‘’ পূর্ব বঙ্গের কল্যাণ হবেই’’’ যে দেশে নানা বিষয়ে পশ্চাৎগামী ও অনুন্নত, এখন হতেই অগ্রসর হবে।……………।আমার জন্ম ঢাকায় সেখানে আমার বাসগৃহ আমি ঢাকার নিবাসী। ঢাকা রাজধাণী হল এতে অনেক উন্নত হল। ইহাতে আমার দুঃখ লইয়া আনন্দ হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি হিন্দু হয়েও মুসলমানদের কল্যাণ চেয়েছেন। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ তিনি সপ্নে এঁকেছিলেন।

আলোচনা / সমালোচনাঃ
কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করে তিনি ঐ সময় একজন আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। চারদিক থেকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু ঘরের সন্তান। কিভাবে তিনি কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করতে পারেন। তিনি শুদু কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করেনি। তিনি কিন্তু তার জিবনে বেশীর ভাগ গ্রন্থই ইসলাম ধর্মের ও ধর্ম গুরুদ্গের নিয়ে বিভিন্ন জীবনী লেখেন। গিরিশ চন্দ্র সেন জিবনে ৩৩ টি গ্রন্থ রচনা করেগেছেন। এর মধ্যা ২২ টি গ্রন্থ ছিল ইসলাম ধর্ম নিয়ে। এর জন্য তিনি হিন্দু সমাজ থেকে পেয়েছেন অপবাদ ও মুসলমান সমাজ থেকে পেয়েছেন সাধুবাদ। তবে অনেক মুসলমান ও তাকে কম তিরস্কার করেনি। এইসকল আলোচনা থেকে রক্ষা পেতে তিনি প্রথমে ছদ্ম নামে কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। মাওলানা আকরাম খাঁ গিরিশ চন্দ্র সেন কর্তৃক কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদকে ( জগতের অষ্টম আশ্চর্য ‘’ বলিয়া প্রকাশ করেন। তিনি কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করাতে মুসলমান সমাজ দ্বারা ‘’ মোল্ভী” পদবী পান। এরপর ব্রাহ্ম সমাজ থেকে তাকে ‘’ ভাই’’ উপাদিতে ভূষিত করেন। এজন্য তাকে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন বলা হয়। গিরিশ চন্দ্র সেন কর্তৃক কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ হওয়ায় তার এক বন্দু বলেন ‘’ জনেক কাদের আমাদের কোরআন পাক অনুবাদ করতেছে হাতে পেলে গর্দান নিতাম’’ নারী শিক্ষার অবদানের জন্য বাঙ্গালী নারী সমজ তাকে পিত্র বলে সম্বোদন করেন। তবে কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করার ফলে কারো কারো কাছ থেকে সমালোচিত হলেও এ কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ তাকে সাফলোর শীর্ষে পৌছে দেন।

মৃত্যুঃ
গিরিশ চন্দ্র সেন জীবনের শেষ সময় কোলকাতায় তার ভাগ্নে বিখাত্য আইনজীবী ( গাজীপুরের সন্তান) কে, জি, গোপ্তের বাসায় থাকতেন। তার বয়স যখন ৭৫ বছর সে সময় তিনি আস্তে আস্তে অসুস্ত হতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারতেন মৃতু তাকে দুয়ারে এসে হাতছানী দিচ্ছে। তায় তিনি নিজ গ্রামে নরসিংদী পাচদোনায় ফিরে আসেন। ১৯১০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। আসুস্ততার কারনে তাকে পাচদোনায় না নিয়ে ঢাকার বাসায় নিয়ে আসেন। ১৯১০ সালে ১৫ আগস্ট তিনি ঢাকার বাসায় মৃতুবরন করেন। মৃতুর পর তাকে তার নিজ গ্রামে পাচদোনায় সমাহিত করা হয়।

শহীদ সাবের

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদ সাবের ১৯৩০ সালে বর্তমান কক্সবাজার জেলার ঈদগাও এলাকায় সোনাপুর গ্রামে নানা বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার স্কুলের সার্টিফিকেটে নাম ছিল এ,কে, এম শহিদুল্লাহ। পড়ে তিনি সাহিত্য সমাজে শহীদ সাবের নামে পরিচিতি লাভ করেন। তার বাবার নাম সালামতউল্লাহ ও মায়ের নাম শফিকা খাতুন। তার বাবা ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা। সালামতউল্লাহ জীবনে দুটি বিয়ে করেন। শহীদ সাবের ছিল ১ম ঘরের সন্তান। এ ঘরে ২ টি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। শহীদ সাবের ও সাইফুল্লাহ। শহীদ সাবের ছিল সাইফুল্লার ৫ বছরের বড়। সাইফুল্লাহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন। তার বাবা ২য় বিয়ে করেন নুরন-নাহার নামে এক কন্যাকে। তার ঘরে জন্ম নেয় আরও সাত সন্তান। শহীদ সাবের ও শফিকা খাতুন ঈদগাও এ থাকতেন শহীদ সাবের ও সাইফুল্লাহকে নিয়ে। আর শহীদ সাবের বাবা ২য় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন কলকাতায়।

শিক্ষা জীবনঃ
শহীদ সাবেরের নানা বাড়ির সবাই ছিল শিক্ষিত। পড়ালেখার জন্য সবাই তাকে যত্ন নিতেন। তার শিক্ষার হাতেখড়ি হয় তার মায়ের কাছে। তার পর তাকে ঈদগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এখানে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। প্রতি ক্লাসে তিনি সাফ্ল্যার স্বাক্ষর রাখেন। তাই তার মা তাকে ভাল স্কুলে ভর্তির চিন্তা করে। তাই তিনি তার বাবার কাছে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। শুরু হল নতুন সংগ্রাম। তার বাবা তাকে ভর্তি করেন কলকাতার নামকরা হেয়ার স্কুলে। সৎ মায়ের কাছে অনেক প্রতিকূলতার মাঝে তাকে পড়তে হত। জামা কাপড় থাকত ময়লা যুক্ত। চেহারায় থাকত অম্লিন ছাপ। মা থাতেও মায়ের অভাব। তবুও তিনি এই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেন। হেয়ার স্কুলে তিনি ২য় স্থান অর্জন করেন। জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন শিশু সংগঠনের সাথে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলে শহীদ সাবেরের বাবা সকলকে নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। শহীদ সাবের ভর্তি হলেন চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯৪৯ সালে চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হয় চট্রগ্রাম সরকারি কলেজে। ভর্তির পর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে ছাত্র ফেডারেশনের সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করেন। ফলে এই সময় তার পড়ালেখার চরম ব্যঘাত হয়। ১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলা থেকে পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৫৪ সালে দেশের সরকার পরিবর্তন হলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর তিনি ভর্তি হয় জগ্ননাথ কলেজে বিএ ক্লাসে। ১৯৫৫ সালে তিনি জগ্ননাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এর পর তিনি আর পড়ালেখা করেনি।

রাজনৈতিক ও সাংবাদিক জীবনঃ
শহীদ সাবের স্কুলে পড়ার সময় ছোট দের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। হেয়ার স্কুলে থাকা অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন শিশু সংগঠনের সাথে। এসময় ছোটদের আসরের লাইব্রেরী ছিল। তিনি এখানে ছোটদের জিবনি,রাজনিতীর বই পড়তেন। ঐ সময় তিনি ‘ ছন্দশিখা’’ নামে হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করেন। এবং তিনি এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। ছন্দশিখার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।
দেশ বিভাগের পর তিন ভর্তি হলেন চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে তখন তিনি মুকুল ফৌজ নামে একটি সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।১৯৪৯ সালে তিনি ভর্তি হয় চট্রগ্রাম সরকারি কলেজে। ভর্তির পর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর কর্মী হয়। তখন কমিউনিস্ট পার্টি যারা করতেন তাদের বিরুধে সরকার কঠিন ভূমিকা পালন করতেন। কোন মিছিল মিটিং সভা করলে তাদের গ্রেফতার করা হত। ১৯৫০ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে ছাত্র ফেডারেশনের সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করেন। ১ম তাকে রাখা হয় চট্টগ্রাম জেলে। পরে রজশাহী জেলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি জগ্ননাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর তিনি দৈনিক সংবাদে যোগ দেন। এখানে তিনি সম্পাদকিয় ও সাহিত্যিক পাতায় লিখতেন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে চাকরি করেন।

পারিবারিক জীবনঃ
শহীদ সাবের ছাত্র জীবনে ছিল পড়ালেখা ,রাজনৈতিক নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তার উপর বিনা কারনে ৪ বছর জেল। জেল থেকে বের হয়ে কর্ম ব্যস্ততার কারনে বিয়ের কথা তিনি চিন্তা করতে পারেনি। এছাড়া তিনি বাবা মা উভয় এর কাছে তিনি ছিল অবহেলিত। রাজনীতি করে বলে তার বাবা তাকে পছন্দ করতেন না। চাপের ফলে বি,এ পাশ করার পরই তিনি কর্মে ব্যস্ত। কর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য এসব নিয়ে তিনি মানসিক চাপে থাকতেন। এছাড়া মামার বাড়িতে থাকা অবস্থায় তিনি এক মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। পরে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। এরফলেই মনে হয় বিয়ের প্রতি তার অনীহা হয়ে পড়েন। ১৯৫৮ সালের পর তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

চাকরি জীবনঃ
শহীদ সাবের ১৯৫৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর তিনি রাজধানী পুরান ঢাকায় ওয়েস্ট এ্যান্ড হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি বেশী দিন চাকরি করেনি। চাকরি ছেড়ে তিনি দৈনিক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এখানে চাকরি করেন। এখানে চাক্রী করা অবস্থায় তিনি পাকিস্তান সরকারের সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার চোখের সমস্যার কারনে পরীক্ষা দেয়নি। এরপর তিনি ফেডারেল ইনফর মেশিন সার্ভিসে পরীক্ষা দেন। এই পরীক্ষায় তিনি সবচেয়ে বেশী মার্কস পান। কিন্তু দুঃখ সাবেরের পিছু ছাড়েনা। একটার পর একটা লেগেই থাকত। তার উপর বিনা কারনে ৪ বছর জেলে থাকতে হয়। এর জন্য তাকে তৎকালীন সরকার তাকে চাকরির জন্য অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি যান তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমানের কাছে। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান তাকে আশ্বাস দেন চাকরী দেয়ার জন্য। কিন্তু এখানে বটে সাধল সামরিক শাসন। ১৯৫৮ সালে ৮ অক্টোবর তৎকালীন পাকিস্তানের সেনা প্রধান আয়ুব খান দেশের সামরিক শাসন জারি করেন। ফলে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান ক্ষমতা চুত্য হন। পূর্ব বাংলার গণতন্ত্রের পতনের সাথে শহীদ সাবেরের ও স্বপ্নের পতন হয়।

সাহিত্যিক জীবনঃ
শহীদ সাবের ছোট কাল থেকেই সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে পড়ার সময় তিনি নিজের হাতে লেখা পত্রিকা বের করেন। এখানে তিনি নিজে নিয়মিত লেখতেন। শহীদ সাবেরের প্রথম লেখা প্রকাশ হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। এ সময় তিনি হেয়ার স্কুলে অধ্যায়নরত। ১৯৫১ সালে তিনি কারাগারে বন্দি অবস্তায় লিখেন তার বিখ্যাত রচনা ‘ আরেক দুনিয়া থেকে’’ । এটি ছিল তার তার বন্দি জীবনের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা। এই লেখাটি সে সময় জেল ফাকি দিয়ে চলে যায় কলকাতার নতুন সাহিত্য পত্রিকায়। এই গ্রন্থটি প্রকাশ হয় জামিল হোসেন নামে। সে সময় তার এ রচনাটি ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৪৭ সালে চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় তিনি ‘ আবেগ’’ নামে একটি গল্পে সীমান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘ এক টুকরো মেঘ’’ নামে একটি গল্প। এছাড়াও বিষকন্যা,জাসু ভাবীর জন্য, দেয়াল, এক টুকরো মেঘ, ছেলেটা, শেষ সংবাদ, প্রানের চেয়ে প্রিয়, যে গল্প কেউ বলে নি। যৌবন, ও চালচুলো, নামে ১০ টি গল্প নিয়ে রচিত হয় ‘’ এক টুকরো মেঘ’’ ১৯৫৭ সালে তার জেল জীবনে নতুন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘’ রোজনামচা’’ গ্রন্থটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ করেন ছোটদের জন্য গল্প গ্রন্থ ‘’ ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান। তিনি একই বছর ‘’ পুশকিনের ইস্কাপনের বিবি, গোগোলের পাগলে ডাইরী ও ক্যাথরিন অয়েন্স পিয়ারের কালো মেয়ের স্বপ্ন, নামে তিনটি অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন।
প্রকৃতপক্ষে শহীদ সাবেরের সাহিত্য জীবন ছিল মাত্র ৪ বছর। ১৯৫৮ সালে তিনি মানসিক ভারসাম্যহিন হয়ে পড়েন। ফলে তিনি আর কোন গ্রন্থ রচনা করতে পারেনি। তার পরও তিনি কিছু কবিতা লিখেছিলেন যার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

ভারসাম্যহীন শহীদ সাবেরঃ
শহীদ সাবের সারা জীবনই মানসিক চাপে ছিলেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তাকে তার মা কলকাতায় পাটিয়ে দেন তার সৎ মায়ের কাছে। সৎ মা তাকে অন্য চোখে দেখতেন। সৎ মায়ে আচারনে তিনি মানসিক ভাবে অনেক কষ্ট পান। মা থাকতে ও মায়ের আদর স্নেহ থেকে তিনি বঞ্চিত হন। ১৯৫০ সালে জেলে নেয়ার পর তার মা তাকে মুক্তির জন্য অনেক ব্যবস্থা করেন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু এতে তিনি রাজি না হওয়ায় বাবার কাছ থেকেও তিনি স্নেহ বঞ্চিত হয়। জেল থেক বের হওয়ার পর তার বাবা তাকে চাকরির জন্য চাপ তাকে সংসারের অভাবের কথা তাকে বলা হত এতে তিনি আরও মানসিক চাপে পড়েন। এছাড়াও তিনি প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার ফলে তিনি নিজেকে অনেক ছোট ভাবতেন। মানসিক ভাবে তিনি আরও ভেঙ্গে পড়েন। সম্ভবত অত্যন্ত মানসিক চাপের কারনে ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে মানসিক পরিবর্তন আসতে থাকে। ১৯৫৯ সালের প্রথম দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। এ সময় তার পড়নে ছিন্ন ভিন্ন কাপড় থাকত। এ সময় তিনি প্রচুর সিগারেট খেতেন। সারাদিন ঘুরে ফিরে রাত্রে ফিরতেন সংবাদ অফিসে। এখানে কখনো ফ্লোরে কখনও চেয়ারে আবার কখনও বারান্দায় ঘুমাতেন। কচিকাঁচার মেলার পরিচালক রোকনুজ্জামান খান দোদা ভাই এর চেষ্টায় সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ্য থেকে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও চিকিৎসার ধারাবাহিকতার অভাবে তিনি আগের অবস্থায় ফিরে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সম্পূর্ণ ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্তাতেই ছিলেন।

সন্মাননা ও স্বীকৃতিঃ
শহীদ সাবের জীবিত অবস্থায় কোন সন্মাননা পায়নি। তবে তার মৃত্যুর পর ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী তার সাহিত্য সরূপ ( মরণোত্তর ) সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন।

মৃত্যুঃ
১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পাকিস্তানের দো’স’র’রা সংবাদ অফিস জ্বালিয়ে দেন। শহীদ সাবের ঐ সময় সংবাদ অফিসে ঘুমাচ্ছিল। সংবাদ অফিস পু’ড়ে ছাই হয়ে যায় সে সাথে শহীদ সাবের ও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শহীদ সাবেরের নাম তো দূরের কথা তার কোন হাড় গোড় ও খোঁজে পাওয়া যায়নি।

Exit mobile version