ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া

প্রাথমিক পরিচয়ঃ

ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার আসল পরিচয় হল তিনি ছিলেন অত্যাচারিত ও নিপীড়িত মানুষের হৃদয়ের কথা। তিনি ছিলেন একজন রাজনিতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সমাজসেবক। তাকে একজন ধর্ম প্রচারক বলা হয়। ইসলাম বিষয়ে বিভিন্ন বি প্রকাশ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্টার মাধ্যমে তিনি সমাজে একজন ইসালামি চিন্তাবিদ হিসেবে ও পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ছিলেন ত্যকালিন প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান মন্ত্রী শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হকের রাজনিতিক উপদেষ্টা ছিলেন।

জন্ম ও পরিচয়ঃ
বিখ্যাত রাজনিতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সমাজসেবক ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া ১৮৯৪ সালে ২৮ ফেব্রু ত্যকালিন রাজশাহী বর্তমান চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার দাদন চক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লাহার উদ্দিন হাজী ও মাতার নাম তুলন বিবি। বাবা ছিলেন ধর্ম গুরু মা ছিলেন গৃহিণী। ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার ডাক নাম ছিল ‘’ ভাদু’’। ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেনির। তবে পরিবারের সবাই ছিল অত্যন্ত ধর্ম পরায়ণ। পরিবারের সবায় ছিল মোটামোটি ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিল।

পরিবার পরিচিতিঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার ছিল তিন ভাই তবে তার বোনের সংখ্যা জানা যায় নি। ভাইদের নাম মুন্সী সুলতান হোসেন, মুহাম্মদ শাহ-জামান, ও মুহাম্মদ ইরফান আলী। ভড় ভাই মুন্সী সুলতান হোসেন ছিল আরবি ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী তাই তাকে মুন্সী বলে ডাকত। এছাড়া তার অন্য দুই ভাই ছিল শিক্ষিত। তার বোনদের নাম না জানা গেলেও তার শিক্ষা জিবনে তাদের বোনের সম্পর্কে জানা যায়। শিশু ‘ ভাদু’’ (ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া )পড়ালেখা হাতেখড়ি ছিল তার ভাই বোনদের হাতে।

শিক্ষা জীবনঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেনির। তবে পরিবারের সবাই ছিল অত্যন্ত ধর্ম পরায়ণ। পরিবারের সবায় ছিল মোটামোটি ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিল। তার পড়ালেখা হাতেখড়ি ছিল তার পরিবারের ভাই বোনদের হাতে। তার ভাই বোনদের হাতে আরবি ও ফার্সি ভাষা শিখেন। ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার বাড়ির কাছে কোন স্কুল প্রতিষ্টান ছিলনা। তায় তাকে ভর্তি করা হয় ১৯০৩ সালে প্রায় তিন মাইল দূরে দুর্লভপুর এম,ই স্কুলে। এখানে তিনি ৬ষ্ট শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯০৯ সালে তিনি ভর্তি হন মুর্শিদাবাদ জেলার নবাব বাহাদুর স্কুলে। ১৯১২ সালে ভর্তি হন মুর্শিদাবাদ সূতি থানার কাঞ্চনতলা স্কুলে। কাঞ্চনতলা স্কুলে ছেড়ে ভর্তি হন নিমতিতা হাই স্কুলে এখান থেকে তিনি ১৯১৩ সালে এন্ট্রাস পাশ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। এখান থেকে তিনি ১৯১৫ সালে আই, এ পাশ করে বি,এ ভর্তি হন ১৯১৮ সালে ও তিনি কৃতিতের সাথে পাশ করেন। এছাড়া তিনি দিল্লীর জামিয়া মিলিয়াতে কিছুকাল পড়ালেখা করেন। তবে তিনি পড়ালেখা শেষ না করেই তিনি দেশে ফিরেন।

বিবাহ বন্ধন ও পারিবারিক জীবনঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া মাত্র ১৯ বছর বয়সে চককীতি গ্রামের( শিশু) কন্যা দেল আফরোজ বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় তিনি ছিলেন নিমতিতা হাই স্কুলে এর বিদায়ী ছাত্র। ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া ও দেল আফরোজ বেগম এর ছিল ৭ টি সন্তান। এরমধ্য ৩ জন পুত্র ও ৪ জন কন্যা। এদের নাম ইকবাল, তাসাদ্দক, রাবেয়া, জিন্নাতুল, তাহেরা, সুদিজান, ও রশিদা, তাদের প্রথম পুত্র ইকবাল, তাসাদ্দক ছিল জমজ । ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার বিয়ের মাত্র ১৬ বছর পর তার বাবা মৃতু বরন করেন। মৃতুর পর ভাইদের মধ্য দন্দ হলে সকলে পৃতক হয়ে যায়।

রাজনৈতিক জীবনঃ
রাজনৈতিক জীবনের অনুপ্রেরনা পান রাজশাহী কলেজে থেকে। এ কলেজে তার সহ পাঠি হিসেবে পান পূর্ব বাংলার প্রধান মন্ত্রী আবু হোসেন সরকারকে। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় তার সাথে দেখা হয় শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হকের সাথে। ১৯১৮ সালে দিল্লীর জামিয়া মিলিয়াতে কিছুকাল পড়ালেখা করার সময় বন্ধুত্ব হয় ঢাকার নবাবা খাজা নাজিম উদ্দিনের সাথে। এতে তিনি রাজনৈতিক জিবনে জড়িয়ে পড়েন। এরপর আস্তে আস্তে তিনি রাজনৈতিক, সমাজ সেবক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিশেষ করে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় জমিদারদের বিরুব্দে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৬ সালে ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া দুর্লভপুরে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি হলেন প্রথম ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ১৯২৯ সালে তিনি মালদহ জেলা প্রজা সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচনে দক্ষিণ মলদহ কৃষক প্রজা পার্টির থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় সভার সদস্য ছিলেন। ১৯৪২ সালে মলদহ জেলার বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে পূর্ব বাংলার আইন সভার নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিপরীতে স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করে পরাজয় বরন করেন। ১৯৪৬ সালে ভাষা আন্দোলনে পক্ষে বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি বাংলা ভাষাকে সমর্থন করেন। ১৯৫৪ সালে প্রদেশিক নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে শিবগঞ্জ থেকে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে শামরিক শাসন জারি হলে প্রাদেশিক পরিষদে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। ১৯৬৪ সালের নির্বাচনে তিনি শিবগঞ্জ………………………।

কৃষক আন্দোলনে ইদ্রিস আহম্মদঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া এর রাজনীতির সূচনা হয় কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমেই। তার রাজনীতির মূল শক্তি ছিল সাধারণ কৃষক, দিনমুজুর, অত্যাচারিত ও নির্যাতিত জনগণ। এদের ভোটের মাধ্যমে তিনি বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সাধারণ কৃষকদের একত্রে নিয়ে তিনি জমিদার মহাজন শোষকদের বিরুধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৩৫ সালে তিনি ময়মনসিংহের কৃষি সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ঢাকার কৃষক সম্মেলনে যোগদেন। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি তার এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টাণ করেন। কৃষকদের প্রতি তার অবস্তান নেয়াতে জমিদার, মহাজন শ্রেনির লোকেরা তার প্রতিষ্টীত মাদ্রাসায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। যেখানে কৃষকদের প্রতি জমিদার, মহাজন শ্রেনির লোকেরা অত্যাচারিত ও নির্যাতিত করতেন সেখানেই তিনি ছুটে যেতেন। তিনি জমিদার, মহাজন শ্রেনির লোকেরা কাছে কাটা হয়ে যান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কৃষকদের সেবা করে গেছেন। এর কারনে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে অসাধারন মানুষ হিসেবে আজীবন বেচে থাকবেন। ১৯৩৭ সালে তিনি আইন সভায় কৃষকদের অত্যাচারিত ও নির্যাতিত এর বিরুধে আইন পাশ করেন।

আত্নমানবতার সেবায় ইদ্রিস আহম্মদ মিয়াঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া তার পুরু জীবনটায় আত্নমানবতায় সেবা করে গেছেন। ১৯০৯ সালে ৭ম শ্রেনিতে পড়ার সময় গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়া লেখা করার জন্য তিনি নিজ গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একজন বালক দ্বারা স্কুল স্থাপন করা বিরল দৃষ্টান্ত। স্থানীয় লোকের শিক্ষার জন্য ১৯১৯ সালে দাদন চকে একটি আধুনিক মাদ্রাসা স্থাপন করেন। ১৯২০ সালে কৃষকদের প্রতি তার অবস্তান নেয়াতে জমিদার, মহাজন শ্রেনির লোকেরা তার প্রতিষ্টীত মাদ্রাসায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। পরে তিনি সরকার ও জনগণের সাহায্য পাকা করে মাদ্রাসাটির পূর্ণ নির্মাণ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি নির্মাণ করেন আদিনা ফজলুল হক কলেজ। ঐ সময় থানা পর্যায়ে কোন কলেজ ছিলনা। কিন্তু তিনি একটি কলেজ নির্মাণ করেন। ১৯৮৬ সালে এটিকে সরকারি করা হয়। এছাড়াও তিনি ফজলুল হক মোয়াল্লেম ট্রেনিং , ফজলুল হক গুরু ট্রেনিং এবং দাদনচক হাই স্কুল নির্মাণ করেন। ১৯৩৮ সালে বন্যায় দুর্গতদের মধ্য সাহায্য ও পূর্ণ বাস্থান নির্মাণে জন্য তিনি সাহায্য করেন। তার নেতৃতে বন্যা রিলিফ কমিটি গঠন করা হয়। বন্যায় দুর্গতদের মধ্য সাহায্য ও পূর্ণ বাস্থান নির্মাণে জন্য তিনি ঐ সময়ের খাদ্য মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদীর সাথে দেখা করেন। দুই দিক থেকে সাহায্য নিয়ে এলাকার মানুষের জন্য সাহায্য করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল স্থাপন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেও তার অবদান রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তিনি মাদার বখশের সাথে একত্ব প্রকাশ করে ভিবিন্ন মিটিং সমাভেশ করেন। এছাড়াও তিনি গরিব ছাত্রদের সাহায্য করেন।
সাহিত্যিক জীবনঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া রাজনীতি, সমাজ সেবার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। সাহিত্যিক ক্ষেত্রে ও তার অবদান কম নয়। ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার সাহিত্যিক ঘটনা শুরু হয় স্কুল থেকে। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষা জানত বলে ইসলামি গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রেও তার অবদান কম নয়। ১৯০৫ সালে তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ( ১ম প্রকাশিত গ্রন্থ ) ‘’ ইসলাম সঙ্গীত’’’ ১৯০৯ সালে রচনা করে গেছেন ‘’পতিতইসলাম’’ একটি কাব্য গ্রন্থ। ১৯২৩ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘’কোরআনের মহাশিক্ষ’’ গ্রন্থতির ১ম খণ্ড। ১৯২৭ সালে প্রকাশ করেন ২য় খণ্ড, ১৯৩৪ সালে প্রকাশ করেন ৩য় খণ্ড। এর ফলে তিনি মুসলিম সমাজে অনেক পরিচিতি লাভ করেন। এই গ্রন্থ পরে মানুষ সহজেই কোরআন ও হজরত মহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারেন। কারন বইটি ছিল বাংলা ভাষায় রচিত। এরপর রচনা করেন ‘’হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা’’ ১৯২৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন অর্থ উপার্জনের সহজ পথ। ১৯২১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘’কৃষকের মর্মবাণী’’’। এরপর প্রকাশ করেন ‘’ বাংলাদেশের ইতিহাস’’ । তার সকল বই ঐ সময় ব্যপক পরিচিতি লাভ করেন। ভিবিন্ন পত্রিকায় তার লেখা বের হত। তার সব লেখা ছিল ইসলাম ও কৃষকদের অধিকার নিয়ে। পত্রিকায় প্রকাশিত গুলোর মধ্য ‘’ দুনিয়ার বোঝা চাষার ঘাড়ে’’ উপায় কি আর উপোষ ছাড়া, অতি আপন চাষী ভাই, ইত্যাদি।

ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া রচিত গ্রন্থ গুলো হলঃ
ইসলাম সংগীত ১৯০৫, ‘’ বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’’, ‘’কৃষকের মর্মবাণী ১৯২১, পতিত ইসলাম ১৯২৩, ‘’কোরআনের মহাশিক্ষ’’ গ্রন্থতির ১ম খণ্ড ১৯২৩, লাক্ষা আবাদ, আর্থ উপার্জনে স্বাধীন সহজ পথ, ১৯২৭, প্রজার দুঃখ কাহিনী ১৯৩৬, হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা ১৯৩৬, ‘’কোরআনের মহাশিক্ষ’’ গ্রন্থতির ২য় খণ্ড, ১৯২৭, ‘’কোরআনের মহাশিক্ষ’’ গ্রন্থতির ৩য় খণ্ড ১৯৩৪,
অপ্রকাশিত গ্রন্থঃ
জবা, গোলাপ, গোল আন্দাম, ছোট গল্প, প্রলাপ বন্যা, তিন তালাকে বিপত্তি , মানুষ না মেথর, সাত জাতির দুর্দর্শা, সমাজ তরী , সুদের আইন।

সাংবাদিক জীবনঃ
রাজনীতি, সাহিত্য চর্চা, সমাজ সেবা, সাংবাদিক সব কিছুতেই ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার ছিল অবদান ও সাফ্ল্যতা। তিনি প্রথম দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সংবাদ পাঠাতেন। পরে তিনি এই পত্রিকার সাথে বালভাবে জড়িয়ে যান। রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘’ ইসলাম প্রভা’’ নামে একটি পত্রিকায় সম্পাদনা করেন। তিনি দৈনিক নবযুগ, মাসিক মোহাম্মদ ও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় নিয়মিত লিখেন। তিনি কাজী নজরুলের ‘ নবযুগ’ পত্রিকার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এতে তিনি কৃষকের সমাজ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার ছাপাকল Board of Director ছিলেন। ১৯৪২ সালে তিনি দাদন চকে একটি ছাপাকল মেশিন স্থাপন করেন। তিনি সাংবাদিক জিবনে বেশী সময় না পেলেও সংবাদ পত্রে লেখার মাধ্যমে তিনি কৃষকের জীবন চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি কৃষকদের অত্যাচারের খবর ও তাদের প্রকৃত জীবন চিত্র গণ মানুষের কাছে প্রকাশ করেন।

সন্মাননাও স্বীকৃতিঃ
ইদ্রিস আহম্মদ মিয়ার জীবনে সবচেয়ে বেশী সন্মাননাও স্বীকৃতি পেয়েছেন তার সবচেয়ে প্রিয় কৃষকদের কাছ থেকে। এজন্য তিনি গরিবদের পাশে থাকের জন্য এবং সাহায্য করার জন্য সে সময় তাকে ‘’ গরিবের বন্দু’’ বলে ডাকা হত। তার মৃত্যুর ২৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর পদক প্রদান করে তার কর্মের সন্মাননাও স্বীকৃতি প্রদান করেন।

মৃত্যুঃ
অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৯ অক্টোবর ইদ্রিস আহম্মদ মিয়া সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। তখন তার বয়স ছিল ৬৭ বছর। মৃত্যুর পর আদিনা ফজলুল হক কলেজ পাজ্ঞনে দাফন করে

উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী

প্রাথমিক পরিচয়ঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে এক নক্ষত্রের নাম। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক সাংবাদিক ও চিত্রকর। তাকে সঙ্গীতও বলা হয়। এর জন্য কিশোরগঞ্জে রায় পরিবারের সুনাম পুরো উপমহাদেশে ছড়িয়ে যান। তার ছেলে সুকমার রায় ও তাকে ছাড়িয়ে যান। পরে তার নাতি ( সুকমার রায়ের ছেলে) সত্যাজিৎ রায় অস্কার বিজয়ের মাধ্যমে রায় পরিবারের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। রায় পরিবারের তিনি প্রজন্মের তিন পুরুষই শিশু সাহিত্যর এক অনন্য নাম। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী এর সূত্রপাত করেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ-১
বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ১৯৬৩ সালে ১০ মে ( তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ) বর্তমান কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার মসুয়া গ্রামে এক ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শ্যামসুন্দর মুন্সী। ও মায়ের নাম জয়তারা। শ্যামসুন্দর মুন্সীর অপর নাম কালীনাথ চৌধরী। শ্যামসুন্দর মুন্সী ও জয়তারার ঘরে আসে ৮টি সন্তান। সরাদারঞ্জ, গিরিবালা, কামদারঞ্জন,( ? ) কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন, ও মৃনালিনি। কাদারঞ্জন পরবর্তীতে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন। তার বড় ভাই সরাদারঞ্জন ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ।

জন্ম ও বংশ পরিচয় ২ –ঃ
কালীনাথ রায় ( শ্যামসুন্দর মুন্সী ) এক নিকট আত্নীয় হরি কিশোর চৌধরী বাস করতেন একই গ্রামে। তিনি ছিলেন এই গ্রামের এক প্রভাবশালী লোক। সম্পদের দিক দেয়েও শ্যামসুন্দর মুন্সীর চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে দুঃখের বিষয় এক দিক দিয়ে তিনি পিছিয়ে। শ্যামসুন্দর মুন্সীর ৮ সন্তান কিন্তু হরি কিশোর চৌধরীর কোন সন্তান ছিলনা। তাই হরি কিশোর চৌধরী শ্যামসুন্দর মুন্সীর কাছে একটি সন্তান দত্তক হিসেবে চান। আত্নীয় সম্পর্কর জন্য তিনি রাজি হয়। এবং তার ৫ বছরের ছেলে কামদারঞ্জনকে ( উপেন্দ্র কিশোর) নির্দাবী করে দিয়ে দেন। হরি কিশোর চৌধরী খুশি হয়ে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নামে তার সকল জমি লিখে দেন। এবং কামদারঞ্জন নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তবে পরবর্তীতে হরি কিশোর চৌধরীর ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তার নাম নরেন্দ্র কিশোর। পরে হরি কিশোর চৌধরী মারা যায়। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী কলকাতায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন এবং নরেন্দ্র কিশোর তার বাবার জমিদারির ভার গ্রহণ করেন। তবে উল্লেখ্য যে এই জমিদারিতে নরেন্দ্রর কোন অংশীদারী ছিল না। কারন হরি কিশোর চৌধরী উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নামে তার সকল জমি লিখে দেন। কিন্তু পরে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী তার সম্পতির অর্ধেক তার ছোট ভাই নরেন্দ্র কিশোর এর নামে লিখে দেন। এবং বাকি অর্ধেক সম্পতি তিনি তাকেই দেখার দায়িত্ব দেন।

শৈশবঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর শৈশব কাটে প্রথম ৫ বছর নিজ পরিবারে। পরের সময়টা কাটে হরি কিশোর চৌধরীর বাড়িতে। পরবর্তীতে তার উইলকৃত নিজ বাড়িতে। তৎকালীন ময়মনসিংহে মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদীতে। এই নদীর কূলেই ছিল মসূয়া গ্রাম। তিনি বড় হন এই নদী দেখে। তা ছাড়া তাদের মসূয়া গ্রামটি ছিল গাছ-পালা নদী-নালায় এক সুন্দর্যর অপরূপ নিলা ভূমি।। ব্রহ্মপুত্র নদীর কল কল দেউয়ের শব্দ ও রূপ নিয়ে তিনি বড় হন। চারদিকে ফসলের মাঠ তাকে করে প্রানবন্দ। এই ব্রহ্মপুত্র নদী ও গ্রাম তাকে সাহিত্যর প্রতি মন গড়তে সাহায্য করেন। বাবা হরি কিশোর চৌধরীর কাছে তিনি ছিলেন একটি হিরের টুকরা। তাই আদরে যত্নে তার কোন অভাব হয়নি। যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। তার পড়ালেখার প্রতি তারা বাবা হরি কিশোর চৌধরী ছিলেন অনেক আগ্রহী। তাকে ভর্তি করেন স্কুলে। তিনি গান বাজনার প্রতি ছিল আগ্রহী। যেখানে গান বাজনা ও সাংস্কৃতি অনুষ্টান হত সেখানেই তিনি অংশ গ্রহণ করতেন। তাই বলা যায় একজন সাহিত্যমনা মানুষের যে ধরনের পরিবেশের ধরকার উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী তার পুরুটায় পেয়েছেন।

শিক্ষা জীবনঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর পড়ালেখার শুরু করেন তার নিজ বাড়িতে (হরি কিশোর চৌধরীর বাড়িতে ) । তার বাল্য শিক্ষার জন্য এক পণ্ডিত রাখা হয় তার নিজ বাড়িতে। এরপর তাকে ভর্তি করেন ময়মনসিংহের জেলা স্কুলে। ময়মনসিংহে এসে তিনি গগনচন্দ্র নামে এক ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ব্রাহ্মণ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৮৮০ সালে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ময়মনসিংহের জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। এরপর তাকে ভর্তি করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে। এ কলেজ থেকে তিনি ১৮৮২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হয় কলকাতার মেট্রোপলিটন কলেজে বি,এ ক্লাসে। ১৮৮৪ সালে তিনি বি,এ পাশ করেন। এরপর তিনি পড়ালেখার ইতি টানেন।

বিবাহ বন্ধন ও পারিবারিক জীবনঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী কলকাতায় থাকার সময় শরীয়তপুরের লনসিং স্কুলের পণ্ডিত ( পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত ) দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যয়ের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যয় ছিলেন একজন নারী শিক্ষার অগ্রপথিক। তার স্ত্রী বরিশালের মেয়ে কদম্বিনী দেবী ছিল ১ম ভারতীয় গ্রাজুয়েট মহিলা ডাক্তার। তাদের বাসায় যাওয়া আসা সুবাদে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যয়ের বড় কন্যা বিধুমুখীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৮৮৬ সালে উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী পারিবারিক মত উপেক্ষা করে বিধুমুখীকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসেন। প্রথম দিকে তাদের বিয়ে মেনে না নিলেও পরে ছেলের কথা চিন্তা করে এই বিয়ে মেনে নেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ও বিধুমুখীর ঘরে আসে ৬টি সন্তান। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। ছেলেরা হল সুকুমার রায়, সুবিনয় রায়, ও সুবিমল রায় ( মেয়ে ) সুখলতা রায়, পুন্যলতা চক্রবর্তী, ও শান্তিলতা রায়। তার বড় ছেলে সুকুমার রায় ছিল একজন বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে F. R. P. S উপাধি পান। সুকুমার রায়ের ছেলে সত্যজিৎ রায়ও ছিল একজন শিশু সাহিত্যিক এবং ১ম বাঙ্গালী অস্কার বিজয়ী। তার ২য় ছেলে পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। ছোট ছেলে সুবিনয় গল্প ও কবিতা লিখতেন। বড় মেয়ে ছিল গল্পকার, চিত্রকার ও বহু গানের রচয়িতা। ২য় কন্যা একজন শিশু সাহিত্যিক ও ছোট কন্যা অকালে মারা যান।

কর্ম জীবনঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেছিলেন। এই জন্য চাকরির জন্য কারো কাছে যেতে হয়নি। প্রেস ব্যবসা, ছবি আঁকা, সংবাদপত্র প্রকাশ, বই লেখা এই গুলোকে তিনি কর্ম হিসেবে বেঁচে নেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ময়মনসিংহের জেলা স্কুলে পড়ার সময় তিনি ছবি আঁকা শিখেন। কলকাতায় মেট্রোপলিটন কলেজে বি,এ পাশ কারার পর তিনি ভিবিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখতেন এবং ছবি আঁকতেন। ১৮৮৫ সালে তিনি নিজেই একটি প্রেস প্রতিষ্টা করেন। প্রেসের নাম দেয় ইউ রায় এ্যান্ড সন্স। প্রেসটির জন্য তিনি যন্ত্রপাতি আনেন ইংল্যান্ড থেকে। এ প্রেসে তিনি নিজের বই ও পত্রিকা ছাপাতেন। পাশাপাশি তিনি অন্যদের কাছথেকে ও অর্ডার নিতেন। তিনি নিজের বইয়ের ছবি নিজেই আঁকতেন। এবং তিনি অন্যদের বই, পত্রিকার ও পোস্টারের ছবি আঁকতেন। এতে তার ভালই আয় হত। তার প্রেসের মান ভাল তাই চারদিকে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। একসময় তার কাজের প্রেসার আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও বই লেখা, পত্রিকার জন্য অনেক সময় দিতে হত। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে সুকুমার রায় ইংল্যান্ড থেকে ছবি আঁকা মুদ্রণ ও স্টুডিও পরিচালনার উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে বাবার প্রেসে কাজ শুরু করে দেন। এরপর তাদের প্রেসের উন্নতি আরও বেড়ে যায়। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর সুকুমার রায় প্রেসের ভার নেন।

সাংবাদিক জীবনঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন। মেট্রোপলিটন কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘ সখা” ও মুকুল পত্রিকায় লিখতেন। ১৯১৩ সালে তিনি নিজেই একটি পত্রিকা খুলেন। এর নাম দেন সন্দেশ। পত্রিকার সম্পাদনার ভারও নিলেন তিনি নিজেই। এ পত্রিকায় তার নিজের লেখার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য লেখকদের লেখাও ছাপা হত। এ পত্রিকায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজয় চন্দ্র, শিব নাথ শাস্রী, যোগেশ্চন্দ্র সহ বিখ্যাত লেখকেরা লেখা পাঠাতেন। এ ছাড়া তার পরিবারের সকলেই ছিল লেখক। তার পরিবারের সকলেই সাহিত্যর প্রতি এমনই আগ্রহ ছিল যে অন্য কেউ লেখা না পাঠালেও উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর পত্রিকা ছাপাতে কোন ধরনের সমস্যা হত না। কারন তার পরিবারের সকলে ছিল সাহিত্যমনা। তার নিজের প্রেসে তিনি সন্দেশ পত্রিকা ছাপাতেন। তিনি পত্রিকার ছবি নিজেই আঁকতেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী সাহিত্য , সাংবাদিকতা, চিত্র আঁকার পাশাপাশি তিনি সংগীত চর্চাও করতেন। তিনি বেহালা, ঢোল, সেতার, ও হারমনিয়াম বাজাতে পড়তেন। এক সময় তিনি বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারক ‘ ডোয়াকিন কোম্পানি’ একটি সঙ্গীত পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটির নাম দেন ‘ সঙ্গীত শিক্ষা” এর সম্পাদনার দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহণ করেন।

সাহিত্যিক জীবনঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী শুধু একজন সুসাহিত্যিকই নয় তিনি সাহিত্য তৈরির কারিগর বটে। তিনি নিজে সাহিত্য চর্চা করতেন এবং পাশাপাশি তার পরিবারের সকলকে সাহিত্যমনা করে তুলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন। ছাত্র অবস্তায় তিনি প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক প্রমদাচরন সেন প্রতিষ্টিত ‘ সখ’ পত্রিকায় লেখা পাটাতেন। ১৮৮৩ সালে তার প্রথম লেখা ‘ মাছি’ শিশুতোষ নিবন্দ সখ পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপর তিনি নিয়মিত এই পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন। পর মাকড়সা, ধূমপান, নিয়ম এবং অনিয়ম, গিলফর সাহেবের অদ্ভুত সমুদ্র যাত্রা ইত্যাদি অনেক গুলো লেখা প্রকাশ হয়। ১৯৮৩ সালে তিনি সন্দেশ পত্রিকা প্রকাশ করলে তার লেখা বেশিরভাগ এই পত্রিকায় প্রকাশ পায়। ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত গ্রন্থ ছেলেদের রামায়ন। এটি তার প্রথম প্রকাশিত বই। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয় সেকালের কথা বইটি। এটি ছিল জীববিদ্যার উপর লেখা। ১৯০৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘ ছেলেদের মহাভারত’। ১৯০৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘মহাভারতের গল্প” গ্রন্থটি। এই দুটি পুরানিক কাহিনী। এই তিনটি গ্রন্থ তৎকালীন কিশোরদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগান। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় ‘ টুটুনির বই’ গল্পটি। এই বইটি শিশু কিশোরদের নিয়ে লেখা। এটি শিশু সাহিত্যর ক্ষেত্রে তার এক অবদান। উনিশ শতক থেকে শুরু করে এখনও বইটি এটি একটি জনপ্রিয় বই। ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয় ‘ ছোটদের রামায়ন’ বইটি প্রকাশের ৬ বছর পর প্রকাশিত হয় ‘ আরও গল্প’’ নামে আরেকটি গল্প বই। ১৯১৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘ পুরানের গল্প’’ নামক বইটি। এই দুটি পুরান কাহিনী সম্বলিত। উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী রচিত প্রায় সকল বই ছোটদের জন্য রচিত। সে সময় এই সকল বই শিশুদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

মৃত্যুঃ
উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী জীবনের শেষ সময়ে এসে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় এ রোগের তেমন চিকিৎসা ছিলনা। তাই তিনি এই রোগে অনেক ভেঙ্গে পড়েন। পড়ে ১৯১৫ সালে ২০ই ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

লাশের কাবাব – অরুপ সরকার রণি

নয়টি জীবন বাঁশখালীতে
পুড়ে হলো ছাই,
নয় টি কাবাব কেঁদে বলে
নায্য বিচার চাই।
শত পূর্ণিমা দিনে রাতে
ফেলছে চোখের জল,
কেন কেন কেন মা
কেন মা তুই বল?
অভয় নগরে ভয়ের আগুন
তুই কেন মা চুপ?
রামু -রংপুরে কেন দেখি
এই উগ্র রূপ!
৪৭ এ জীবন দিলো
আমার পিতামহ,
ভেবে দেখো সেই ঘটনা
কতো টা ভয়াবহ।
৭১ এ জীবন দিলো
আমার মাতা পিতা,
এই মাটিতে আছে মিশে
পায় নি তারা চিতা।
বোনের কান্না বলো তোমরা
কেমন করে ভুলি?
দেশের জন্য দিলো জীবন
আমার বোন ফুলি।
একটা কথা বলতে চাই
সেই কথাটাই খাঁটি,
মরতে আমি রাজী আছি
ছাড়বো না এই মাটি।

Exit mobile version