কথোপকথন-৮ – রেদোয়ান মাসুদ

– এ কী, তুমি হাসছ যে!
– কেন, হাসতে নেই?
– কিন্তু এই হাসি যে আমাকে…।
– থামলা কেন, বলেই ফেলো।
-তুমি কি জানো না, হাসিও কারো কারো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়?
– ছিঃ! ওসব বাজে বকতে নেই। কিন্তু তোমার চোখে জল কেন?
– শুধু কাঁদলেই কি চোখে জল আসে?
– আজীবন তো তাই দেখে এলাম, এ কী তুমি আবার হাসছ?
– ঐ যে তোমার ব্যাকুল মন, আমার মনটিও যে প্রশান্ত হয়ে গেল?
– যাও, আমার চোখের সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। মেয়েমানুষের কাছে আসতে নেই।
– মেয়েমানুষ কি স্বপ্নে দেখা পরি, যে কাছে গেলেই উড়ে যাবে?
– উড়ে যায় না, প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।
– ভোমরা কিন্তু ফুলের মধু খায় না, জমিয়ে রাখে।
– কিন্তু মানুষ মধু খেয়ে হারিয়ে যায়।
– ভালোবাসা ফুরানোর জিনিস নয়। কাছে এলে…।
– থামলা কেন? বারবার এমন করলে আমার বুক কাঁপে যে।
– দেখি তো কোথায় কাঁপছে?
– ছিঃ! ওসব দেখতে নেই।
– তোমার চোখে আজ এত ধার কেন? আমি যে খুন হয়ে যাচ্ছি।
– হলাম না হয় আজ খুনি। কিন্তু তোমার চোখেও যে অনেক ধার।
– তাহলে আমিও খুনি?
– তাই তো দেখছি। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব, উত্তর দেবে তো?
– কেন দেবো না? কিন্তু সব কথা কি আর মুখে বলা যায়?
– মুখে যা বলা যায় না, তা চোখে বলে দিলেই তো হয়।
– হ্যাঁ, এজন্যই তো আজ খুনের অপরাধে দুজন একই খাঁচায় বন্দি। বলো তুমি কী জানতে চাও?
– বলবে তো, সত্যি সত্যি?
– আজ না হয় একটু মিথ্যা বললাম, তাই বলে কি মেনে নিতে পারবে না?
– কিন্তু তোমার চোখ যে আজ সব সত্যি বলে দিচ্ছে।
– শুধুই চোখ?
– এ কী! তুমি কাঁপছো যে?
– সেটা কি তোমরা বোঝো? বুঝলে আর একথা জিজ্ঞেস করতে না।
– দেখি তো কোথায় কাঁপছে?
– ভালো হচ্ছে না কিন্তু ছাড়ো বলছি।
– ছাড়তে তো ভালোবাসি নাই। এ কী, তুমি একেবারে শান্ত হয়ে গেলে যে!
– আগেই তো বলেছি, তোমরা আসলে মেয়েদের মন বোঝো না।
– না বুঝলে কী করে তুমি শান্ত হলে?
– ছিঃ! অমন করো না তো, বকা দেবো কিন্তু।
– বকা? হা হা হা।
– কেন বকতে নেই?
– ওটা বকা না, মধু।
– মধু কিন্তু বেশিদিন থাকলে বিষ হয়ে যায়।
– আমি সেই বিষেই মরতে চাই।

আগস্ট ২০২২
কাঁটাবন, ঢাকা

কথোপকথন-৭ – রেদোয়ান মাসুদ

– এই যে, শুনছ?
– কে ডাকছে পেছন থেকে? কণ্ঠটা এত পরিচিত কেন?
– একটু পেছন ফিরে তাকাবে?
– হায়! হায়! আপনি?
– হ্যাঁ, আমি। অবাক হলে যে!
– না, এই আর কী!
– এত সহজেই তুমি এতটা বদলে গেলে?
– আমি? ময়লা পোশাকের সেই পুরনো গন্ধটা নাকে যায়নি? অথচ তোমার শরীরে বিদেশি সুগন্ধির ঘ্রাণ।
– তাই বলে কি আমাদের সম্পর্কটা এতটা নিচে নেমে গেল?
– ম্যাডাম! নিচে নয়, অনেক ওপরে, অনেক।
– আমি আজ সেই পুরনো ডাকটাই শুনতে চাই।
– আপনারা এখন অনেক বড়লোক, তুমি বললে অপমান করা হবে।
– কিন্তু ভালোবাসার যে অপমান হচ্ছে, সেটা?
– অপমান? হা হা হা! যেদিন দুর্গন্ধ পোশাকের কথা বলে আমাকে ফেলে গিয়েছিলে, সেদিন ভালোবাসার অপমান হয়নি?
– আজ বুঝি তার বদলা নিচ্ছ, তাই না?
– বদলা নয়, সম্মান করছি। বড়লোকদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়।
– আমাকে আজ যত খুশি অপমান করো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার পায়ে পড়ি আর একবারের জন্যও আমাদের ভালোবাসাকে অপমান করো না।
– ভালোবাসা! ভালোবাসা বলতে আবার কিছু আছে নাকি? টাকা হলে ওসব কিনতে পাওয়া যায়।
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আমিও তাই হয়েছি। দামি ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকি। শরীরটা ছিন্নভিন্ন করে খায় কিন্তু…
– কিন্তু কী? তুমি কাঁদছ?
– না, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো।
– হায়! হায়! তুমি হাসছ যে?
– এই যে তোমার ডাক, আমার হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া দিয়ে গেল।
– দুঃখিত, আমাকে ক্ষমা করবেন, তুমি ডেকে আপনাকে অসম্মান করাটা ঠিক হয়নি।
– প্লিজ আমাকে আর কাঁদিয়ো না।
– আমি কাঁদিয়েছি? এই যে দ্যাখো জল পড়তে পড়তে চোখের নিচে কালি জমে গেছে।
– আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ। আমি যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি।
– কীসের প্রায়শ্চিত্ত? ঐ যে দামি গাড়ি, বাড়ি, লাল পানি! আরো কত কী!
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। তবে…
– তবে কী আবার, বড়লোকের বিরাট কারবার।
– বড়লোক! হা হা হা!
– হাসছ কেন? সুখ বুঝি এখন রাশিরাশি থাকে তাই না?
– সুখ! ঐ যে মদের গন্ধ। শোনো, মদের নেশায় ভালোবাসা থাকে না, থাকে পশুত্ব। শুধু জোর করে শরীরটাকে ছিন্নভিন্ন করে খায়। আর নেশা কেটে গেলে কাছে তো দূরের কথা, দূরেও থাকে না।
– এসব আমরা বুঝি। আমাকে এখন যেতে হবে। মায়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করে তারপরে ঘরে ফিরতে হবে।
– মা?
– হ্যাঁ, মা।
– কিন্তু তার কী হয়েছে?
– ভুলে গেছ সব? তোমার সেই অপমানের কথা শুনে মা যে সেদিন স্ট্রোক করেছিল।
– আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার মায়ের চিকিৎসার ভার নিতে চাই।
– চিকিৎসার ভার? আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু এতটা ছোটলোক না।
– প্লিজ! আমাকে আর অপমান করো না।
– আমার সামনে থেকে এখন যাও, আমাকে কাজে যেতে হবে।
(৮ ঘণ্টা পর)
– হায় হায়! তুমি এখনও এখানে?
– আবার এসেছি।
– কেন এসেছ?
– তোমাকে দেখতে, কতদিন হয় প্রাণ খুলে শ্বাস নিই না। আজ যে আবার প্রাণটি জুড়িয়ে গেল।
– ঐ যে লাল পানি আছে না? সেগুলো খাও! তাতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
– প্লিজ, আর খোঁটা দিও না। এ কী তুমি কাঁদছ?
– ও কিছু না, আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।
– তাই বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে?
– আবার বলছি আমার পিছু নিও না। ঔষধ খাওয়ার জন্য মা বসে আছে।
– আমিও যাবো, প্লিজ! একটু আস্তে হাঁটো।
– আমার সেই সময় নেই। আর কে কীভাবে হাঁটবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।
(২০ মিনিট পর)
– মা, মা, মা! তুমি এভাবে চলে গেলে? মৃত্যুর সময় তোমার মুখটিও দেখতে পেলাম না। মা আমি এখন কাকে নিয়ে থাকবো? আর কীভাবেই বাঁচবো? তুমি যে আমাকে কিছুই বলে গেলে না।
(১ মাস পর)
– মা তুমি এভাবে ঘুমিয়ে গেলে। আমি এখন আর কার জন্য কাজে যাবো?
– আমার জন্য, মানুষ তো আর একা থাকে না। প্লিজ ওভাবে কেঁদো না, শরীর খারাপ করবে যে।
– তোমার জন্য? হা হা হা! প্লিজ! প্রাপ্তি তুমি ফিরে যাও। নীড়হারা পাখিকে একা থাকতে দাও।
– তা আর হয় না। হারিয়ে যাওয়া পাখিও যে নীড়ে ফিরেছে। এখন চলো নতুন স্বপ্ন বুনি।
– তুমি ফিরে যাও প্রাপ্তি। ভাঙা গ্লাস কখনো জোড়া লাগে না।
– আমি ফিরে যেতে আসিনি, শুধু তোমার হয়েই থাকতে এসেছি।
– পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, শুধু সুখে থাকার আশায় কাছে টানার ব্যর্থ প্রত্যয়, আর দূরে চলে যাওয়ার এক বাস্তব অভিনয়।

০৪.১৫ এএম
১৭.০২.২০২৩
কাঁটাবন, ঢাকা

লাশের কাবাব – অরুপ সরকার রণি

নয়টি জীবন বাঁশখালীতে
পুড়ে হলো ছাই,
নয় টি কাবাব কেঁদে বলে
নায্য বিচার চাই।
শত পূর্ণিমা দিনে রাতে
ফেলছে চোখের জল,
কেন কেন কেন মা
কেন মা তুই বল?
অভয় নগরে ভয়ের আগুন
তুই কেন মা চুপ?
রামু -রংপুরে কেন দেখি
এই উগ্র রূপ!
৪৭ এ জীবন দিলো
আমার পিতামহ,
ভেবে দেখো সেই ঘটনা
কতো টা ভয়াবহ।
৭১ এ জীবন দিলো
আমার মাতা পিতা,
এই মাটিতে আছে মিশে
পায় নি তারা চিতা।
বোনের কান্না বলো তোমরা
কেমন করে ভুলি?
দেশের জন্য দিলো জীবন
আমার বোন ফুলি।
একটা কথা বলতে চাই
সেই কথাটাই খাঁটি,
মরতে আমি রাজী আছি
ছাড়বো না এই মাটি।

কীর্তিমান – রেদোয়ান মাসুদ

ফুল বলে- ওরে ভ্রমর মধুর কেমন স্বাদ?
ভ্রমর বলে- তোর বুকে থেকেই তো মিটাই মনের আহ্লাদ।
ফুল হেসে বলে- মিটাস বলেই তো চাইলাম জানতে
ভ্রমর বলে- ওরে বলদ মধুর স্বাদ জানিস না এ কথা পারি না মানতে।
হঠাৎ ফুলটি যখন ছিঁড়ে নিলো বাগানের মালি
ভ্রমর কেঁদে বলে- আগে জানলে তোকে দিতাম না গালি।
ফুল কেঁদে বলে- মরার সময় একি তুই বললি
ভ্রমর চোখ মুছে বলে- মধুর স্বাদ বুঝেছি তুই যখন চললি।
ফুল বলে- ওরে গাধা দেশ প্রেমিক খায় না দেশের সম্পদ
ভ্রমর বলে- দাও গালি, পারি নাই দিতে, খেয়েছি রসদ।
ফুল হেসে বলে- আমরা জন্মেছি শুধু দেওয়ার জন্য
ভ্রমর কেঁদে বলে- জানতাম না বলেই তো করি নাই গন্য।
ফুল বলে- ওরে ভ্রমর মৃত্যু ডাকছে এবার যাই
ভ্রমর বলে- না খেয়ে দিয়েছিস আমাদের তোদের মৃত্যু নাই।
ফুল হেসে বলে- সময় থাকতে বুঝলি না তবুও নেই কোনো অভিমান
ভ্রমর বলে- এজন্যই মৃত্যুর পরেই বেঁচে থাকিস, তোরা কীর্তিমান।

Exit mobile version