গাছ ও কুঠারের গল্প

একদিন গাছ কাটার সময় গাছ কুঠারকে বলল দেখ কুঠার এভাবে আমাকে কাটিস না, এর অপরাধে কিন্তু একদিন তোকেও পুড়তে হবে। কুঠার সেদিন হেসে হেসে বলল, তোকে পুড়িয়ে কয়লা বানানো হবে আর সেই কয়লা দিয়েই কিন্তু আবার তুই এই গাছকেই পোড়াবি।

গাছ লজ্জা পেয়ে আর কিছু বলল না। একদিন সেই কুঠারের মালিক কুঠারটি সান দেওয়ার জন্য এক কামারের কাছে নিয়ে যায়। কামার কুঠারটিকে কয়লায় পুড়িয়ে লাল করে ফেলে সান দেওয়ার জন্য।
এ সময় উপরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাছ হাসতে হাসতে বলল, দেখ কুঠার আমাদের কেটেছিস এখন আমার পুড়িয়ে বানানো কয়লা দিয়েই তোকে পোড়া হচ্ছে। কঠারও তখন হাসতে হাসতে বলল, আমার সান দেওয়া শেষ হোক তখন বুঝবি কে কাকে পোড়ায় আর কে কে কাকে কাটে।

সান দেওয়া শেষে ওই কুঠারটি যখন আবার গাছ কাঠতে শুরু করল তখন গাছ আবার বলল, তোর কোনো লজ্জা নেই কুঠার। একটু আগে আমাদের কয়লা দিয়ে পোড়ালাম তাতে তোর বিচার হয় নি তাই না? কুঠার তখন হাসতে হাসতে বলল, আমাকে যত পোড়াবে আমি ততো ধার হবো আর তোদের কেটে সব বন ছাড়খার করে দিব। এভাবে কুঠার প্রতিদিন বনের সব গাছ কেটে ফেলতে লাগল।

বনের শেষ গাছে যখন কুঠারটি আঘাত করল তখন গাছটি বলল, আমাকে কাটিস না আর আমাকে কাটলে তোর আছাড়ি লাগানোর মতো আর গাছ থাকবে না। বনের সব গাছ শেষ হয়ে গেল। এরপর একদিন কুঠারের মালিক কুঠারটি নিয়ে কামারের কাছে যাবে সান দিতে। কিন্তু তখন দেখতে পেল কুঠারের আছাড়ি ভাঙা। ভাঙা আছাড়ি সহই কুঠারটি নিয়ে মালিক কামারের কাছে যায়। কামার সেই কুঠারটিকে কয়লার মধ্যে দেয় পোড়ানোর জন্য।

সাথে ভাঙা আছাড়িটিকেও কয়লার ময়লার মধ্যে ফেলে দেয়। তখন কুঠার, কয়লা ও আছাড়ি একসাথে পুড়তেছিল। এসময় কুঠারের মালিক কামারকে বলল, কুঠারের একটি আছাড়িও লাগিয়ে দেন। তখন কামার বলল, এই অঞ্চলে কোনো গাছ নেই তাই আমি আছাড়ি পাবো কই? এ সময় কয়লার মধ্যে পুড়তে থাকা ভাঙা আছাড়িটি কুঠারকে বলল, কাউকে ধংস করলে নিজেকেও ধংস হতে হয়। মনে রাখবি এ পৃথিবীতে কেউই স্বয়ংসমপূর্ণ নয়। সবাইই সবার উপর নির্ভরশীল। আমাদের ধংস করে দিয়েছোস এখন তুইও ধংস হয়ে যাবি।

লেখকঃ রেদোয়ান মাসুদ
কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক

প্রাক্তনকে ভুলে থাকার ৭ টি উপায়

হাজার বছর একসাথে থেকেও কাছের মানুষটাকে চেনা যায় না আবার দুই দিনেও অনেনকে চিনে ফেলা যায়। কিন্তু কাছের মানুষ যে কখন কাচের মানুষ হয়ে যাবে তা কেউই-ই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাছাড়া সম্পর্ক হয় বলেই তো সম্পর্ক ভাঙ্গে। আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু এই ভাঙ্গা-গড়ার খেলার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। ভুলতে হয় অতীতকে, ভুলতে হয় প্রাক্তনকে। তবে মুখে বললেই তো আর হয় না। চেষ্টা করলে হয়তো অনেকটাই ভুলে থাকা যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ভুলে থাকবেন প্রাক্তনকেঃ

১। প্রিয় মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ হয়েই গেছে, তাই এখন প্রথম কাজ হচ্ছে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা। আসলে যোগাযোগ রেখে কাউকে কখনও ভোলা যায় না। বর্তমান সময়ে অনেকেই বলেন- বিচ্ছেদের পরে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখছেন। কিন্তু এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর হয়। কারণ প্রিয় মানুষটাকে বারবার দেখলে বা তার সাথে কথা বললে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলোই বারবার মনে করিয়ে দেয়। ফলে কষ্ট না কমে বরং বাড়তেই থাকে।

২। মানুষ কাজের অবস্থায় থাকলে অনেক কিছুই ভুলে থাকতে পারে। কিন্তু যখন হাতে কোনো কাজ না থাকে তখন জীবনের সকল স্মৃতি চোখের সামনে ভাসতে থাকে। তাছাড়া ব্যর্থতার স্মৃতিগুলোই সবচেয়ে বেশি তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই নিজেকে যতটা ব্যস্ত রাখবেন প্রাক্তনকে ভুলে থাকা আপনার জন্য ততটা সহজ হবে।

৩। বিচ্ছেদ হলেই মানুষ একাকিত্বকে আপন করে নেয়। কিন্তু এই অভ্যাসটাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত না। কারো সাথে বিচ্ছেদ হলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের মানুষের সাথে সময় দেবেন। সম্ভব হলে দূরে কোথায় ঘুরে আসবেন। মনে রাখবেন স্মৃতি ভোলার অন্যতম ঔষধ হলো স্থান পরিবর্তন।
৪। যার সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে তার দেওয়া উপহারগুলো চোখের সামনে থেকে দূরে রাখুন। তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি থেকে দূরে থাকবেন। বারবার তার দেওয়া বা আপনার পাঠানো ম্যাসেজ চেক করবেন না। তার আইডি আনফলো করে রাখুন ও ইনবক্সের সকল ম্যাসেজ ডিলেট অথবা আর্কাইভে পাঠিয়ে দিন। তবে এক্ষেত্রে তাকে ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম কাজ।

৫। প্রাক্তনের উপর রাগ বা জেদ পুষে রাখবেন না। পারলে তাকে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা করে দিলে আপনার আত্মায় প্রশান্তি কাজ করবে আর তার প্রতি তেমন ক্ষোভ কাজ করবে না। মনে রাখবেন কারো প্রতি যত রাগ বা ক্ষোভ পুষে রাখবেন তাকে তত বেশি মনে পড়বে।

৬। বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে দিয়ে প্রাক্তনের উপর নজরদারি করবেন না। অথবা তার সম্পর্কে অতিরিক্ত খোঁজ-খবর নেবেন না। কারো সম্পর্কে যত খোঁজ নেবেন তার প্রতি তত ভালোবাসা অথবা ঘৃণা জন্মাবে। কিন্তু মনে রাখবেন প্রাক্তনের উপর ঘৃণা অথবা ভালোবাসা দুটোই আপনার জন্য ক্ষতিকর।

৭। কারো সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেই তার প্রতি নেতিবাচক ধারণা করবেন না। মনে রাখবেন বিচ্ছেদ শুধু বিপরীত মানুষটার কারণেই হয় না। এখানে নিজের দোষও থাকতে পারে। তাই বিচ্ছেদের জন্য যারই বেশি ভূমিকা থাকুক না কেন সেটাকে অতীত ভেবে নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা করুন।

লেখকঃ রেদোয়ান মাসুদ

কীর্তিমান – রেদোয়ান মাসুদ

ফুল বলে- ওরে ভ্রমর মধুর কেমন স্বাদ?
ভ্রমর বলে- তোর বুকে থেকেই তো মিটাই মনের আহ্লাদ।
ফুল হেসে বলে- মিটাস বলেই তো চাইলাম জানতে
ভ্রমর বলে- ওরে বলদ মধুর স্বাদ জানিস না এ কথা পারি না মানতে।
হঠাৎ ফুলটি যখন ছিঁড়ে নিলো বাগানের মালি
ভ্রমর কেঁদে বলে- আগে জানলে তোকে দিতাম না গালি।
ফুল কেঁদে বলে- মরার সময় একি তুই বললি
ভ্রমর চোখ মুছে বলে- মধুর স্বাদ বুঝেছি তুই যখন চললি।
ফুল বলে- ওরে গাধা দেশ প্রেমিক খায় না দেশের সম্পদ
ভ্রমর বলে- দাও গালি, পারি নাই দিতে, খেয়েছি রসদ।
ফুল হেসে বলে- আমরা জন্মেছি শুধু দেওয়ার জন্য
ভ্রমর কেঁদে বলে- জানতাম না বলেই তো করি নাই গন্য।
ফুল বলে- ওরে ভ্রমর মৃত্যু ডাকছে এবার যাই
ভ্রমর বলে- না খেয়ে দিয়েছিস আমাদের তোদের মৃত্যু নাই।
ফুল হেসে বলে- সময় থাকতে বুঝলি না তবুও নেই কোনো অভিমান
ভ্রমর বলে- এজন্যই মৃত্যুর পরেই বেঁচে থাকিস, তোরা কীর্তিমান।

Exit mobile version