সৌদি আরব বহুকাল যাবত বহির্বিশ্ব থেকে একরকম অন্তরালেই ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে দেশটি পালটে যাচ্ছে। দেশটি এক সময় একেবারে রক্ষণশীল ছিল। কিন্তু দিন দিন সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে দেশটি। এখন আর সেখানে হিজাব বা ঐতিহ্যবাহী লম্বা পোশাক বাধ্যতামূলক নয়। নারীরা স্টিয়ারিং হুইলে, পাহাড়ে, অফিসে—সব জায়গায় নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। ভিশন-২০৩০ এর আলোকে উপসাগরীয় এই দেশটির সরকার পর্যটনকে সামনে রেখে খুলে দিচ্ছে নতুন দিগন্ত। যেখানে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন ভ্রমণকারীদের জন্য হাতছানি দিচ্ছে। আজ আমরা সৌদি আরবে সেরা ৫টি দর্শণীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করব-

১. রিয়াদ: মরুভূমির রাজকীয় উজ্জ্বলতা

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এখন এক মহা নির্মাণযজ্ঞের শহর। বিলাসবহুল হোটেল, ফাইভ-স্টার ব্র্যান্ড ও উচ্চাভিলাষী মেট্রো রেল প্রকল্প দিয়ে শহরটি যেন ভবিষ্যতের ক্যানভাস হয়ে যাচ্ছে। তবে প্রযুক্তির ঝলক ছাপিয়ে চোখে পড়ে আত-তুরাইফের মাটির ইটের দুর্গ। যা আল-সৌদ রাজবংশের সূতিকাগার। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐত্যিহ্যের স্বীকৃতিতে স্থানটি এখন নতুন আলো ও আধুনিক জাদুঘরের ছোঁয়ায় পুনর্জীবিত।

২. তাবুক: ভবিষ্যতের গেটে দাঁড়িয়ে

উত্তরের শহর তাবুক—একসময় নিঃসঙ্গ মরুভূমি ছিল। এখন এটি “দ্য লাইন” প্রকল্পের সূচনাস্থল। এখানে গড়ে উঠছে ১৭০ কিমি দীর্ঘ, কার্বন-মুক্ত এক বিস্ময়কর শহর। নিকটবর্তী ট্রোজেনা প্রকল্পে কৃত্রিম হ্রদ আর বরফঢাকা স্কি রিসোর্ট গড়ে তোলা হচ্ছে, মরুভূমির বুকে যা শুনলে আজও অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—এ কি স্বপ্ন, না বাস্তব?

৩. আল উলা: মরূদ্যানের রহস্যঘেরা সৌন্দর্য

আল উলা হলো সৌদি আরবে পর্যটনের মুকুটমণি। পৃথিবীর বৃহত্তম আয়নাযুক্ত ভবন মারায়া এখানে অবস্থিত। যা এক শিল্প ও সঙ্গীতের আধুনিক কেন্দ্র। চারদিকে দারুণ পাহাড়, পাথরের হাতি আকৃতির শিলা ও প্রাচীন হেগরা নগরীর ধ্বংসাবশেষ এই অঞ্চলকে ইতিহাস ও রোমাঞ্চের মিলনস্থলে পরিণত করেছে। রাতে খোলা আকাশের নিচে খাবারের ট্রাক, সংগীত ও বরফ-ঠাণ্ডা পানীয়—সব মিলিয়ে যেন এক মরুদ্যান ফেস্টিভ্যাল।

৪. হেগরা: ইতিহাসের সোনালী ছায়া

পেত্রার যমজ শহর হেগরা। যেটি সৌদি আরবের প্রথম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি এখন বিশ্ব পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিটি শিলা ও খোদাই যেন একেকটি জীবন্ত গল্প বলে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সংরক্ষণশীলতার সংমিশ্রণে এই শহরটি ইতিহাসে ফিরেছে নতুন প্রাণ নিয়ে।

৫. মদিনা: আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের নীরব প্রতিচ্ছবি

ইসলাম ধ’র্মে’র দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর মদিনা এখন অমুসলিমদের জন্যও আংশিকভাবে উন্মুক্ত। যদিও মসজিদে নববীতে প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে পুলম্যান জমজম হোটেলের উচ্চতলা থেকে সেই দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের শান্ত পদচারণায় পুরো শহর যেন আধ্যাত্মিকতায় মোড়া এক মহাকাব্যের দৃশ্য।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব কেবল এক রহস্যময় মরুভূমি নয়। বরং এক পরিবর্তনশীল রূপকথার রাজ্য। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই দেশটি এখন বিশ্ব পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত, অভ্যর্থনামূলক ও চমকে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতায় ভরপুর। এখন আপনিও বেরিয়ে পড়তে পারেন সৌদি দেখার আকুলতা নিয়ে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *