– এই যে, শুনছ?
– কে ডাকছে পেছন থেকে? কণ্ঠটা এত পরিচিত কেন?
– একটু পেছন ফিরে তাকাবে?
– হায়! হায়! আপনি?
– হ্যাঁ, আমি। অবাক হলে যে!
– না, এই আর কী!
– এত সহজেই তুমি এতটা বদলে গেলে?
– আমি? ময়লা পোশাকের সেই পুরনো গন্ধটা নাকে যায়নি? অথচ তোমার শরীরে বিদেশি সুগন্ধির ঘ্রাণ।
– তাই বলে কি আমাদের সম্পর্কটা এতটা নিচে নেমে গেল?
– ম্যাডাম! নিচে নয়, অনেক ওপরে, অনেক।
– আমি আজ সেই পুরনো ডাকটাই শুনতে চাই।
– আপনারা এখন অনেক বড়লোক, তুমি বললে অপমান করা হবে।
– কিন্তু ভালোবাসার যে অপমান হচ্ছে, সেটা?
– অপমান? হা হা হা! যেদিন দুর্গন্ধ পোশাকের কথা বলে আমাকে ফেলে গিয়েছিলে, সেদিন ভালোবাসার অপমান হয়নি?
– আজ বুঝি তার বদলা নিচ্ছ, তাই না?
– বদলা নয়, সম্মান করছি। বড়লোকদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়।
– আমাকে আজ যত খুশি অপমান করো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার পায়ে পড়ি আর একবারের জন্যও আমাদের ভালোবাসাকে অপমান করো না।
– ভালোবাসা! ভালোবাসা বলতে আবার কিছু আছে নাকি? টাকা হলে ওসব কিনতে পাওয়া যায়।
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আমিও তাই হয়েছি। দামি ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকি। শরীরটা ছিন্নভিন্ন করে খায় কিন্তু…
– কিন্তু কী? তুমি কাঁদছ?
– না, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো।
– হায়! হায়! তুমি হাসছ যে?
– এই যে তোমার ডাক, আমার হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া দিয়ে গেল।
– দুঃখিত, আমাকে ক্ষমা করবেন, তুমি ডেকে আপনাকে অসম্মান করাটা ঠিক হয়নি।
– প্লিজ আমাকে আর কাঁদিয়ো না।
– আমি কাঁদিয়েছি? এই যে দ্যাখো জল পড়তে পড়তে চোখের নিচে কালি জমে গেছে।
– আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ। আমি যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি।
– কীসের প্রায়শ্চিত্ত? ঐ যে দামি গাড়ি, বাড়ি, লাল পানি! আরো কত কী!
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। তবে…
– তবে কী আবার, বড়লোকের বিরাট কারবার।
– বড়লোক! হা হা হা!
– হাসছ কেন? সুখ বুঝি এখন রাশিরাশি থাকে তাই না?
– সুখ! ঐ যে মদের গন্ধ। শোনো, মদের নেশায় ভালোবাসা থাকে না, থাকে পশুত্ব। শুধু জোর করে শরীরটাকে ছিন্নভিন্ন করে খায়। আর নেশা কেটে গেলে কাছে তো দূরের কথা, দূরেও থাকে না।
– এসব আমরা বুঝি। আমাকে এখন যেতে হবে। মায়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করে তারপরে ঘরে ফিরতে হবে।
– মা?
– হ্যাঁ, মা।
– কিন্তু তার কী হয়েছে?
– ভুলে গেছ সব? তোমার সেই অপমানের কথা শুনে মা যে সেদিন স্ট্রোক করেছিল।
– আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার মায়ের চিকিৎসার ভার নিতে চাই।
– চিকিৎসার ভার? আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু এতটা ছোটলোক না।
– প্লিজ! আমাকে আর অপমান করো না।
– আমার সামনে থেকে এখন যাও, আমাকে কাজে যেতে হবে।
(৮ ঘণ্টা পর)
– হায় হায়! তুমি এখনও এখানে?
– আবার এসেছি।
– কেন এসেছ?
– তোমাকে দেখতে, কতদিন হয় প্রাণ খুলে শ্বাস নিই না। আজ যে আবার প্রাণটি জুড়িয়ে গেল।
– ঐ যে লাল পানি আছে না? সেগুলো খাও! তাতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
– প্লিজ, আর খোঁটা দিও না। এ কী তুমি কাঁদছ?
– ও কিছু না, আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।
– তাই বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে?
– আবার বলছি আমার পিছু নিও না। ঔষধ খাওয়ার জন্য মা বসে আছে।
– আমিও যাবো, প্লিজ! একটু আস্তে হাঁটো।
– আমার সেই সময় নেই। আর কে কীভাবে হাঁটবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।
(২০ মিনিট পর)
– মা, মা, মা! তুমি এভাবে চলে গেলে? মৃত্যুর সময় তোমার মুখটিও দেখতে পেলাম না। মা আমি এখন কাকে নিয়ে থাকবো? আর কীভাবেই বাঁচবো? তুমি যে আমাকে কিছুই বলে গেলে না।
(১ মাস পর)
– মা তুমি এভাবে ঘুমিয়ে গেলে। আমি এখন আর কার জন্য কাজে যাবো?
– আমার জন্য, মানুষ তো আর একা থাকে না। প্লিজ ওভাবে কেঁদো না, শরীর খারাপ করবে যে।
– তোমার জন্য? হা হা হা! প্লিজ! প্রাপ্তি তুমি ফিরে যাও। নীড়হারা পাখিকে একা থাকতে দাও।
– তা আর হয় না। হারিয়ে যাওয়া পাখিও যে নীড়ে ফিরেছে। এখন চলো নতুন স্বপ্ন বুনি।
– তুমি ফিরে যাও প্রাপ্তি। ভাঙা গ্লাস কখনো জোড়া লাগে না।
– আমি ফিরে যেতে আসিনি, শুধু তোমার হয়েই থাকতে এসেছি।
– পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, শুধু সুখে থাকার আশায় কাছে টানার ব্যর্থ প্রত্যয়, আর দূরে চলে যাওয়ার এক বাস্তব অভিনয়।
০৪.১৫ এএম
১৭.০২.২০২৩
কাঁটাবন, ঢাকা